পৃষ্ঠাসমূহ

বৃহস্পতিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

Support "Monster In Me" on Kickstarter!



Help publish "Monster In Me" - a darkly comedic novel about a schizoaffective guy who has a lot of wrongs to right.


Back in October 2015, I was in a deep depression.
Forcing myself to turn all of that negative energy into positive, I wrote a young adult novel titled, "Monster in Me," following a young male protagonist on his journey after being diagnosed as schizoaffective.

The story is a dark comedy, dealing with adult subject matter such as mental illness, mildly sexual themes, addiction, grief & loss, and ultimately redemption.

The story has since received over 20,000 views, 191 reviews, 112 follows and 292 favorites. After hearing from so many people just how much the story touched them, I decided that I wanted to share Monster in Me with the rest of the world by self-publishing.

The thing is, self-publishing is expensive! I am not trying to profit from this project - I just want to see Monster in Me shared with all the many people who don't feel like there are enough stories out there exploring and explaining mental illness.

Please share and consider contributing to this cause, and help me make Monster in Me a success. Thank you.

শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৩

বাংলা ভাষা আন্দোলন

বাংলা ভাষা আন্দোলন

ভাষা আন্দোলন পূর্ব পাকিস্তানে (বর্তমান বাংলাদেশ) সংঘটিত একটি সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক আন্দোলন, যা ছিল বাংলা ভাষাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম
১৯৪৭ সালে দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ভারত ভাগ হয়ে পাকিস্তান গঠিত হয়, কিন্তু পাকিস্তানের দুটি অংশ পূর্ব পাকিস্তান (পূর্ব বাংলা হিসেবেও পরিচিত) ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে সাংস্কৃতিক, ভৌগলিক ও ভাষাগত দিক থেকে পার্থক্য ছিল প্রচুর১৯৪৮ সালে পাকিস্তান সরকার ঘোষণা করে উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষাপূর্ব পাকিস্তানের বাংলাভাষী মানুষ (যারা সংখ্যার বিচারে সমগ্র পাকিস্তানে সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল) এ সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ হয়ফলে পূর্ব পাকিস্তানে বাংলাভাষার সম-মর্যাদার দাবীতে শুরু হয় আন্দোলন১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর খাজা নাজিমুদ্দিন জানান যে ভাষার প্রশ্নে পাকিস্তান সরকারের সিদ্ধান্তই চূড়ান্তএই ঘোষণার ফলে আন্দোলন আরো জোরদার হয়ে ওঠেপুলিশ ১৪৪ ধারা জারি করে মিটিং-মিছিল ইত্যাদি বেআইনি ঘোষণা করে১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি (৮ ফাল্গুন ১৩৫৮) এই আদেশ অমান্য করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বহুসংখ্যক ছাত্র ও কিছু রাজনৈতিক কর্মী মিছিল শুরু করেনমিছিল ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের কাছাকাছি এলে পুলিশ মিছিলের উপর গুলি চালায়গুলিতে নিহত হন সালাম, রফিক, বরকত, জব্বার সহ আরো অনেকেএই ঘটনায় সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানে ক্ষোভের আগুন দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়েঅবশেষে কেন্দ্রীয় সরকার গণ আন্দোলনের মুখে নতি স্বীকার করে এবং ১৯৫৬ সালে বাংলা ভাষাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি প্রদান করে২০০০ সালে ইউনেস্কো বাংলা ভাষা আন্দোলন ও মানুষের ভাষা ও কৃষ্টির অধিকারের প্রতি সম্মান জানিয়ে ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে ঘোষণা করে
রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই আন্দোলনের মাধ্যমেই প্রথম বাংলা ভাষার রাষ্ট্র চাই ধারণাটির জন্ম হয় এবং এ ধারণাই পরবর্তীতে বিভিন্ন বাঙালি জাতীয়তা আন্দোলন, যেমন ৬ দফা আন্দোলন এবং পরবর্তীতে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে প্রেরণা যোগায়বাংলাদেশে ২১ ফেব্রুয়ারি শহীদ দিবস হিসেবে উদযাপিত হয় এবং দিনটিতে জাতীয় ছুটি থাকেএ আন্দোলনে শহীদদের স্মরণে ঢাকা মেডিকেল কলেজের কাছে একটি শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়েছে

পটভূমি

বর্তমানের পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ রাষ্ট্র দুটি পূর্বে ব্রিটিশ শাসনাধীন অবিভক্ত ভারতবর্ষের অন্তর্ভুক্ত ছিল১৯-শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে উর্দু ভাষাটি কিছু মুসলমান রাজনৈতিক ও ধর্মীয় নেতা যেমন স্যার খাজা সলিমুল্লাহ, স্যার সৈয়দ আহমদ খান, নওয়াব ভিকার-উল-মুলক এবং মৌলভী আবদুল হকের চেষ্টায় ভারতীয় মুসলমানদের লিঙ্গুয়া ফ্রাঙ্কায় পরিণত হয় উর্দু একটি ইন্দো-আর্য ভাষা, যা ইন্দো-ইরানীয় ভাষাগোষ্ঠীর সদস্য, যা আবার ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা-পরিবারের অন্তর্ভুক্তউর্দু ভাষাটি অপভ্রংশের (মধ্যযুগের ইন্দো-আর্য ভাষা পালি-প্রাকৃতের সর্বশেষ ভাষাতাত্ত্বিক অবস্থা) ওপর ফার্সি, আরবি এবং তুর্কিরঘনিষ্ঠভাবে প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে দিল্লি সুলতানাত  সাম্রাজ্যের সময়ে দক্ষিণ এশিয়ায় বিকশিত হয় এর পারসিক-আরবি লিপির কারণে উর্দুকে ভারতীয় মুসলমানদের ইসলামী সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ হিসেবে বিবেচনা করা হত; যেখানে হিন্দি এবং দেবনাগরী লিপিকে হিন্দুধর্মের উপাদান বিবেচনা করা হত
উর্দুর ব্যবহার ক্রমেই উত্তর ভারতের মুসলমানদের মধ্যে জনপ্রিয়তা লাভ করতে থাকে, কিন্তু বাংলার (ব্রিটিশ ভারতের পূর্বাঞ্চলের একটি প্রদেশ) মুসলমানেরা বাংলা ভাষা ব্যবহারেই অভ্যস্ত ছিলবাংলা পূর্বাঞ্চলীয়মধ্য ইন্দো ভাষাসমূহ হতে উদ্ভূত একটি পূর্বাঞ্চলীয় ইন্দো-আর্য ভাষা,[৬] যা বাংলার নবজাগরণের সময়ে বিপুল বিকাশ লাভ করে১৯ শতকের শেষভাগে মুসলিম নারী শিক্ষার অগ্রদূত বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন বাংলা ভাষায় সাহিত্য চর্চা শুরু করেন এবং আধুনিক ভাষা হিসেবে বাংলার বিকাশ তখন থেকেই শুরুবাংলা ভাষার সমর্থকরা ভারত ভাগের পূর্বেই উর্দুর বিরোধিতা শুরু করেন এবং ১৯৩৭ সালের মুসলিম লীগের লক্ষ্মৌ অধিবেশনে বাংলার সদস্যদের উর্দুকে ভারতের মুসলিমদের লিঙ্গুয়া ফ্রাঙ্কা মনোনয়নের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান ছিল উর্দু-বাংলা বিরোধের প্রথম নমুনামুসলিম লীগ ছিল ব্রিটিশ ভারতের একটি রাজনৈতিক দল, যা ভারত ভাগের সময় পাকিস্তানকে একটি মুসলিম রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে

আন্দোলনের সূচনা

১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের পর পূর্ব পাকিস্তানের (পূর্ব বাংলা হিসেবেও পরিচিত) বাংলাভাষী ৪ কোটি ৪০ লক্ষ মানুষ ৬ কোটি ৯০ লাখ জনসংখ্যা বিশিষ্ট নবগঠিত রাষ্ট্র পাকিস্তানের নাগরিকে পরিণত হয় কিন্তু পাকিস্তান সরকার, প্রশাসন এবং সামরিক বাহিনীতে পশ্চিম পাকিস্তানীদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছিল ১৯৪৭ সালেই করাচীতেঅনুষ্ঠিত জাতীয় শিক্ষা সম্মেলনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণাপত্রে উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ব্যবহারের সুপারিশ করা হয় এবং প্রচারমাধ্যম ও স্কুলে কেবলমাত্র উর্দু ব্যবহারের প্রস্তাব করা হয় তাৎক্ষণিকভাবে এ প্রস্তাবের বিরোধিতা ও প্রতিবাদ জানানো হয়ঢাকার ছাত্রসমাজ আবুল কাশেমের নেতৃত্বে মিছিল করে, যিনি ছিলেন তমদ্দুন মজলিশ নামক একটি বাঙালি ইসলামীয় সাংস্কৃতিক সংগঠনের সম্পাদকওই সমাবেশে বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা এবং পূর্ব পাকিস্তানে শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহারের প্রবল দাবী উত্থাপন করা হয় কিন্তু পাকিস্তান পাবলিক সার্ভিস কমিশন পূর্ব সিদ্ধান্ত মোতাবেক বাংলাকে তাদের অনুমোদিত বিষয়তালিকা হতে বাদ দেয় এবং সাথে সাথে মুদ্রা ও স্ট্যাম্প হতেও বাংলা অক্ষর লুপ্ত হয়কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ফজলুর রহমান উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা বানানোর জন্যে নানান প্রচেষ্টা চালাতে থাকেন এমন পরিস্থিতিতে পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ ক্ষেপে ওঠে এবং ১৯৪৭ সালের ৮ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বাঙালি ছাত্রদের একটি বিশাল সমাবেশে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দানের আনুষ্ঠানিক দাবী উত্থাপন করা হয়দাবী আদায়ের লক্ষ্যে ছাত্ররা ঢাকায় মিছিল, মিটিং ও র‌্যালির আয়োজন করে
প্রথিতযশা বাঙালি বুদ্ধিজীবীরা কেবলমাত্র উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা নির্বাচিত না করার বিপক্ষে বিভিন্ন যুক্তি উপস্থাপন করেনভাষাবিদ মুহম্মদ শহীদুল্লাহ দেখান যে উর্দু পাকিস্তানের কোন অঞ্চলেরই মাতৃভাষা নয়, এবং বলেন, "যদি আমাদের একটি দ্বিতীয় রাষ্ট্রভাষা নির্বাচন করতে হয়, কেবলমাত্র তখনই উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা নির্বাচনের ব্যাপারটি বিবেচনা করা যেতে পারে রাজনীতিবিদ ও সাংবাদিক আবুল মনসুর আহমদ বলেন যদি উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা মনোনীত করা হয়, তবে পূর্ব পাকিস্তানের শিক্ষিত সমাজ সরকারি পদে কাজ করবার পক্ষে 'অশিক্ষিত' 'অযোগ্য' হয়ে পড়বে ১৯৪৭ সালের ডিসেম্বর মাসের শেষের দিকে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দানের দাবী আদায়ের জন্যে প্রথম রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়তমদ্দুন মজলিশের অধ্যাপক নূরুল হক ভূঁইয়া এ কমিটির আহবায়ক ছিলেনপরবর্তীতে সংসদ সদস্য শামসুল হক বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার আন্দোলনকে বেগবান করার লক্ষ্যে একটি নতুন কমিটি আহবান করেনগণপরিষদ সদস্য ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত পাকিস্তানের সংবিধান অধিবেশনে সদস্যদের বাংলা বক্তব্য উপস্থাপনের ও দাপ্তরিক কাজে এর ব্যবহার স্বীকৃত করার জন্যে আইন প্রণয়নের প্রস্তাব করেন তার প্রস্তাবে পূর্ব বাংলার সদস্যগণ ও আইন প্রণেতা প্রেম হরি বর্মণ, ভূপেন্দ্র কুমার দত্ত এবং শ্রীশ চন্দ্র চট্টোপাধ্যায় সমর্থন জ্ঞাপন করেন[৮] তবে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীলিয়াকত আলি খান এবং মুসলিম লীগের নেতারা এ প্রস্তাবকে পাকিস্তানের জনগণকে বিভক্ত করার অপচেষ্টা আখ্যা দিলে প্রস্তাবটি বাতিল হয়ে যায়

১৯৪৮ এর উত্তেজনা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং শহরের অন্যান্য কলেজের শিক্ষার্থীরা মুদ্রা, স্ট্যাম্প এবং নৌবাহিনীর সদস্য সংগ্রহ পরীক্ষা ইত্যাদি আনুষ্ঠানিক কাজে বাংলা ভাষা ব্যবহার রহিত করার প্রতিবাদে ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ তারিখে সর্বাত্মক ধর্মঘটের আহবান করেছাত্ররা বাংলাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা ঘোষণার দাবী পুনর্ব্যক্ত করেধর্মঘটের সময় কিছুসংখ্যক রাজনৈতিক নেতা যেমন শামসুল হক, শওকত আলী, কাজী গোলাম মাহবুব, অলি আহাদ, শেখ মুজিবুর রহমান, আবদুল ওয়াহেদ প্রমুখ পুলিশের হাতে গ্রেফতার করেমিছিলের অন্যতম সংগঠক মোহাম্মদ তোয়াহা এক পুলিশ অফিসারের হাত থেকে রাইফেল ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করতে গিয়ে আহত হয়ে হাসপাতালে যানছাত্রনেতাদের মধ্যে আব্দুল মতিন এবং আব্দুল মালেক উকিল মিছিলে অংশগ্রহণ করেন
১১ মার্চ বিকেলে পুলিশের নৃশংসতা ও ধরপাকড়ের প্রতিবাদে একটি সমাবেশ করা হয়একদল ছাত্র মিছিল করে মুখ্যমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিনের বাসভবনের দিকে যাত্রা করলে পুলিশ তাদের ঢাকা হাইকোর্টের সামনে বাধা দেয়মিছিলটি তখন দিক পরিবর্তন করে সেক্রেটারিয়েট ভবনের দিকে যাত্রা শুরু করেতখন পুলিশ মিছিলে হামলা চালায় এবং বেশ কয়েকজন ছাত্র ও নেতাকে আহত করে যাদের মধ্যে ছিলেন শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হক ১২ থেকে ১৫ মার্চ লাগাতার ধর্মঘট পালিত হয়এমত পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রী নাজিমুদ্দিন ছাত্রনেতাদের সাথে একটি চুক্তি করেন যাতে তিনি তাদের কিছু দাবী-দাওয়া মেনে নেন, কিন্তু বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবীটি অগ্রাহ্য করেন
চলমান এই গণআন্দোলনের মধ্যে পাকিস্তানের গভর্ণর জেনারেল মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ ১৯ মার্চ ১৯৪৮ তারিখে ঢাকায় পৌঁছান২১ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে এক নাগরিক সংবর্ধনায় তিনি ভাষা আন্দোলনকে মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির ষড়যন্ত্র হিসেবে উল্লেখ করেন দ্ব্যর্থহীন চিত্তে তিনি ঘোষণা করেন, "উর্দু এবং কেবলমাত্র উর্দুই" মুসলিম জাতির চেতনার প্রতীক এবং উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা, অন্য কোন ভাষা নয় তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেন যারা তারা মতের পরিপন্থী, তারা "পাকিস্তানের শত্রু"২৪ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে গিয়ে তিনি একই ধরনের বক্তব্য রাখেনউভয় সভাতেই উপস্থিত শ্রোতাদের একটি বড় অংশ চিৎকার করে তার এই বক্তব্যের প্রতিবাদ জানায়একই দিনে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের একটি প্রতিনিধিদল জিন্নাহর সাথে সাক্ষাৎ করে এবং বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবী জানিয়ে একটি স্মারকলিপি প্রদান করেএই প্রতিনিধি দলে ছিলেন শামসুল হক, কামরুদ্দিন আহমদ, আবুল কাশেম, তাজউদ্দিন আহমেদ, মোহাম্মদ তোয়াহা, আজিজ আহমদ, অলি আহাদ, নঈমুদ্দিন আহমদ, শামসুল আলম, নজরুল ইসলাম প্রমুখজিন্নাহ খাজা নাজিমুদ্দিনের সাথে ছাত্রনেতাদের চুক্তি বাতিল ঘোষণা করেন ২৮ মার্চ ঢাকা ত্যাগের পূর্বে এক রেডিও ভাষণে তিনি তার "একমাত্র উর্দু" নীতি পুনর্ব্যক্ত করেন
এর পরপরই মাওলানা আকরম খাঁ এর সভাপতিত্বে পূর্ব বাংলা ভাষা কমিটি গঠিত হয়, যার কাজ ছিল পূর্ব বাংলার সরকারের জন্যে ভাষা সমস্যার ওপর একটি প্রতিবেদন পেশ করা কমিটি ১৯৫০ সালের ৬ ডিসেম্বর প্রতিবেদনটি সমাপ্ত করে, যাতে ভাষা নিয়ে সংঘাতের সমাধান প্রস্তাব করা হয়

১৯৫২: ভাষা আন্দোলনের পুনর্জাগরণ

উর্দু-বাংলা বিতর্কের আগুন নতুন করে জ্বলে ওঠে যখন জিন্নাহর উত্তরসূরি নতুন গভর্ণর জেনারেল খাজা নিজামুদ্দিন ১৯৫২ সালের ২৭ জানুয়ারির এক ভাষণে "একমাত্র উর্দু" নীতির পক্ষে তার সুদৃঢ় সমর্থন ব্যক্ত করেন[১৮] ৩১ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বার লাইব্রেরি হলে মাওলানা ভাসানীর উপস্থিতিতে একটি সভায়সর্বদলীয় কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রভাষা কর্মী পরিষদ গঠিত হয়[৮][২৮] ঐ সভায় কেন্দ্রীয় সরকারের আরবি লিপিতে বাংলা লেখার প্রস্তাবের কঠোর নিন্দা জানানো হয়পরিষদ ২১ তারিখে সর্বময় প্রতিবাদের অংশ হিসেবে হরতাল, সমাবেশ ও মিছিলের বিস্তারিত কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করে[১৮] ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে জড়ো হয় এবং সরকারকে আরবি লিপিতে বাংলা লেখার হাস্যকর প্রস্তাব প্রত্যাহার করে বাংলাকে উপযুক্ত মর্যাদা দানের দাবী জানায়যখন ঢাকায় আন্দোলনের প্রস্তুতি চলছে তখন ২০শে ফেব্রুয়ারি সরকার এক মাসের জন্য সভা, সমাবেশ ও মিছিল নিষিদ্ধ করে ঢাকা শহরে ১৪৪ ধারা জারি করেঐদিন রাতে বৈঠক করে 'সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ' ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচী পালনের সিদ্ধান্ত নেয়

২১ ফেব্রুয়ারির ঘটনা

২১ তারিখ সকাল নয়টায় ছাত্ররা ছাত্ররা ঢাকা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গনে জড়ো হতে শুরু করেবিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং অন্যান্য কর্মকর্তারাও এসময় ক্যাম্পাসে উপস্থিত ছিলেন এবং পুলিশ পুরো ক্যাম্পাস ঘিরে রেখেছিলবেলা সোয়া এগারটার দিকে ছাত্ররা গেটের কাছে একত্রিত হয়ে প্রতিবন্ধকতা ভেঙে রাস্তায় নামতে চাইলে পুলিস কাঁদানে গ্যাস বর্ষণ করে ছাত্রদের সতর্ক করে দেয়[৮] ছাত্রদের একটি দল দৌড়ে গিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজে আশ্রয় নেয়, বাকিরা পুলিশ পরিবেষ্টিত ক্যাম্পাসে মিছিল করতে থাকেউপাচার্য পুলিশকে টিয়ার গ্যাস শেল নিক্ষেপ করা বন্ধ করতে অনুরোধ করেন এবং ছাত্রদের ঐ স্থান ত্যাগ করতে বলেনকিন্তু ছাত্ররা চলে যাবার সময় ১৪৪ ধারা ভঙ্গের অভিযোগে পুলিশ কয়েকজন ছাত্রকে গ্রেফতার করেগ্রেফতারের সংবাদ পেয়ে বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা পূর্ব বাংলা আইন পরিষদের কাছে একত্রিত হয় এবং বেলা ২টার দিকে আইন পরিষদের সদস্যরা আইনসভায় যোগ দিতে এলে ছাত্ররা তাদের বাধা দিয়ে আইনসভায় তাদের প্রতিবাদ কর্মসূচি বাধাগ্রস্ত করার ব্যাপারটি পেশ করার দাবী জানায়এর মধ্যেই একদল ছাত্র আইনসভা ভবনে প্রবেশ করার চেষ্টা চালায় এবং পুলিশ তাদের ওপর গুলি চালিয়ে আব্দুস সালাম, রফিকউদ্দিন আহমদ, আবুল বরকতএবং আব্দুল জব্বারসহ বেশ কয়েকজন ছাত্রকে হত্যা করে ছাত্রদের ওপর গুলিবর্ষণের সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে সারা শহরে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়দোকানপাট, অফিস ও রাস্তার যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায় এবং স্বতঃস্ফূর্ত ধর্মঘটের সূচনা হয় আইনসভায় ছয় জন সদস্য, যার মধ্যে ছিলেন মনোরঞ্জন ধর, বসন্তকুমার দাস, শামসুদ্দীন আহমেদ এবং ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত, মুখ্যমন্ত্রী নূরুল আমিনকে আহত ছাত্রদের দেখতে হাসপাতালে যাওয়ার অনুরোধ করেন এবং শোক প্রকাশের চিহ্ন হিসেবে আইনসভার কার্যক্রম স্থগিত রাখার প্রস্তাব করেন মাওলানা আব্দুর রশীদ তর্কবাগীশ, শরফুদ্দীন আহমেদ, শামসুদ্দীন আহমেদ খন্দকার এবং মসিহউদ্দীন আহমেদ সহ রাজস্ব বিভাগের কয়েকজন সদস্য এ উদ্যোগকে স্বাগত জানান[৩০] কিন্তু নূরুল আমিন এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন

২২ ফেব্রুয়ারির ঘটনা

পুরো প্রদেশজুড়ে মানুষ ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে বিশাল সব মিছিল বের করতে শুরু করে এবং পুলিশের গুলিবর্ষণের নিন্দা জানায় ঢাকার কার্জন হলে তিরিশ হাজারেরও বেশি মানুষের সমাবেশ ঘটেপ্রতিবাদমুখর এ অস্থিতিশীল সময়ে পুলিশী তৎপরতায় আরও চার জনের মৃত্যু ঘটেএ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং রেডিও স্টেশন থেকে সকল শ্রেণীর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বেরিয়ে আসেন এবং মিছিলে যোগদান করেন প্রতিবাদকারীরা সরকারের পদলেহী দুটি পত্রিকা অফিস জুবিলি প্রেস  মর্ণিং নিউজ এর অফিস জ্বালিয়ে দেয় পুলিশ নওয়াবপুর রোডে এক জানাযা অনুষ্ঠিত হবার সময় গুলিবর্ষণ করে, যার ফলে শফিউর রহমান এবং নয় বছরের বালক অহিউল্লাহ সহ আরও কয়েকজন শহীদ হন

চলমান গণঅসন্তোষ

২৩ ফেব্রুয়ারি রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের কাজ শুরু করে২৪ ফেব্রুয়ারি ভোরে এর কাজ শেষ হয়স্মৃতিস্তম্ভটির পাদদেশে হাতে লেখা একটি চিরকুটে লেখা ছিল "শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ". শহীদ ভাষাসৈনিক শফিউর রহমানের পিতা স্মৃতিস্তম্ভটির উদ্বোধন করেন, কিন্তু ২৬ ফেব্রুয়ারি পুলিশ স্থাপত্যটি গুঁড়িয়ে দেয় ২৫ ফেব্রুয়ারি নারায়ণগঞ্জের শিল্পশ্রমিকরা ধর্মঘট পালন করে ২৯ ফেব্রুয়ারি একটি প্রতিবাদ কর্মসূচির পালন করা হয় এবং প্রতিবাদকারীরা পুলিশের বেদম প্রহারের শিকার হয়
সরকার সংবাদপত্রে ভাষা আন্দোলন সংক্রান্ত সংবাদ সেন্সর করতে থাকে এবং প্রতিবাদের সময় আহত-নিহতদের সঠিক সংখ্যা প্রকাশ থেকে বিরত থাকেসরকারপন্থী সংবাদমাধ্যমগুলো বিশৃংখলা সৃষ্টি ও ছাত্রদের ক্ষুব্ধ করে তোলার জন্যে হিন্দু ধর্মাবলম্বী  কমিউনিস্টদের ঘাড়ে দোষ চাপায় আবুল বরকত ও রফিক উদ্দিন আহমেদের পরিবার পুলিশের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করতে চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু পুলিশ সে মামলা গ্রহণ করে না৮ এপ্রিল প্রকাশিত সরকারি প্রতিবেদনে ছাত্রদের ওপর পুলিশের গুলি চালনোর কোন যুক্তিযুক্ত কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না ১৪ এপ্রিল সংবিধান অধিবেশন পুনরায় শুরু হলে পূর্ব বাংলার সদস্যরা ভাষার প্রশ্নটি উত্থাপন করেন, কিন্তু মুসলিম লীগের সদস্যরা এ প্রসঙ্গটি এড়িয়ে যান ১৬ এপ্রিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়া হয় এবং সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা কর্মী পরিষদ ২৭ এপ্রিল বার এসোসিয়েশন হলে একটি আলোচনা সভার আয়োজন করেউক্ত সভায় বক্তারা গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিদের মুক্তি, সাধারণ মানুষের অধিকারের ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া এবং বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা নির্বাচনের জন্যে সরকারের প্রতি জোরালো দাবী জানান

১৯৫২ সাল পরবর্তী ঘটনা

আওয়ামী লীগের সমর্থন লাভ করে সর্বদলীয় কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রভাষা কর্মী পরিষদ ২১ ফেব্রুয়ারি শহীদ দিবস হিসেবে পালন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেওই রক্তস্নাত দিনের প্রথম বর্ষপূর্তিতে পূর্ব পাকিস্তানের সর্বস্তরের মানুষ শোকপ্রকাশের চিহ্ন হিসেবে কালো ব্যাজ ধারণ করেবেশিরভাগ অফিস, ব্যাংক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এ উপলক্ষে বন্ধ রাখা হয়ছাত্ররা কলেজ ও পুলিশের সাথে আইনশৃংখলা রক্ষা করার অঙ্গীকার করে আরমানিটোলায় একটি জনসমাবেশে ১,০০,০০০ এরও বেশি লোক সমবেত হয়, যেখানে মাওলানা ভাসানী ও অন্যান্য রাজনৈতিক বন্দীদের অবিলম্বে মুক্তি দেবার দাবী জানানো হয় তবে ফজলুর রহমানের মতো কিছু পশ্চিম পাকিস্তানী রাজনীতিবিদ বলেন যারা বাংলাকে আনুষ্ঠানিক ভাষা হিসেবে দেখতে চায় তারা সবাই রাষ্ট্রের শত্রুবাঙালি ছাত্র ও সাধারণ মানুষ সকল বাধা উপেক্ষা করে প্রতিবাদের বর্ষপূর্তি উদযাপন করে১৯৫৪ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মিছিল হয় এবং বিভিন্ন হলে শোকের প্রতীক কালো পতাকা উত্তোলন করা হয় পুলিশ ছাত্র ও অন্যান্য প্রতিবাদকারীদের গ্রেফতার করেগ্রেফতারকৃতরা জামিন প্রদান করতে অস্বীকৃতি জানায়, পরে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়

১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট

১৯৫৪ সালে পূর্ব বাংলার প্রাদেশিক আইনসভা নির্বাচনে ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগ ও যুক্তফ্রন্ট প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেযুক্তফ্রন্ট পরিচালিত হয় এ. কে. ফজলুল হক ও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে এবং তারা ছিল প্রাদেশিক সায়ত্ত্বশাসন বৃদ্ধির পক্ষে, যা প্রতিপক্ষ মুসলিম লীগের নেতাদের কঠোর সমালোচনার শিকার হয়নির্বাচনকে সামনে রেখে যুক্তফ্রন্ট যেন আন্দোলনের কোন সুযোগ না পায় সে জন্য মুসলিম লীগ তাদের চেষ্টা অব্যাহত রাখেফলে শহীদ দিবসের পূর্বে যুক্তফ্রন্টের নেতা ও কর্মীরা ব্যাপক ধরপাকড়ের শিকার হয় প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী বগুড়ার নেতৃত্বে মুসলিম লীগের সংসদ সদস্যদের এক সভায় বাংলাকে আনুষ্ঠানিক মর্যাদা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়এ সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে পশ্চিম পাকিস্তানে নানান রকম অস্থিরতা শুরু হয়, কারণ অন্যান্য নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীরাও তাদের নিজ নিজ আঞ্চলিক ভাষার স্বীকৃতির দাবীতে আন্দোলন শুরু করেউর্দু ভাষার সমর্থক মৌলভী আবদুল হক বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেয়ার কোন প্রস্তাব বরদাশত করা হবে না বলে ঘোষণা দেনতিনি মুসলিম লীগের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ১,০০,০০০ লোক নিয়ে একটি মিছিল করেন ফলাফলে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হয় নাপূর্ব পাকিস্তানের জনগণ এর জবাব দেয় ব্যালটের মাধ্যমে - ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে জয়লাভ করে আর মুসলিম লীগের আসনসংখ্যা ইতিহাসে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে যায়
যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রীসভার আদেশে বাংলা একাডেমী নামক একটি প্রতিষ্ঠান তৈরি হয়, যার কাজ ছিল বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও ঐতিহ্য লালন-পালন ও সংরক্ষণ করা কিন্তু যুক্তফ্রন্টের শাসনামল দীর্ঘায়িত হবার সুযোগ পায় না, গভর্ণর জেনারেল গুলাম মুহাম্মদ যুক্তফ্রন্ট সরকার রদ করে ১৯৫৪ সালের ৩০ মে গভর্ণরের শাসন কায়েম করেন গভর্ণরের শাসনকাল অবসান হলে যুক্তফ্রন্ট ১৯৫৫ সালের ৬ মে পুনরায় মন্ত্রীসভা গঠন করেতবে আওয়ামী লীগ এ মন্ত্রীসভায় অংশ নেয় না
যুক্তফ্রন্টের ক্ষমতায় ফেরার পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৫৬ সালে প্রথমবারের মতো ২১ ফেব্রুয়ারি শান্তিপূর্ণ পরিবেশে উদযাপিত হয়সরকার নতুন শহীদ মিনার নির্মাণের বড়ো একটি প্রকল্প অনুমোদন করেসংবিধান অধিবেশনে নিহত ছাত্রদের স্মরণে পাঁচ মিনিট বিরতি পালন করা হয়বাঙালি নেতারা বড়ো বড়ো মিছিল সংগঠিত করেন আর সকল সরকারি অফিস ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়

সংবিধান সংশোধন

১৯৫৪ সালের ৭ মে সংবিধান গঠনকারী সভা সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাকে আনুষ্ঠানিক মর্যাদা প্রদান করা হবেএ সিদ্ধান্তে মুসলিম লীগও সমর্থন জ্ঞাপন করে ১৯৫৬ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি বাংলাকে পাকিস্তানের দ্বিতীয় আনুষ্ঠানিক ভাষার স্বীকৃতি দেয়া হয় এবং পাকিস্তানের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২১৪(১) পুনর্বিন্যস্ত করে বলা হয় "পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দু এবং বাংলা।"
পরবর্তীতে আইয়ুব খানের নেতৃত্বে গঠিত সামরিক সরকার উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসেবে পুনঃপ্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালায়তবে ৬ জানুয়ারি, ১৯৫৯ এর একটি সামরিক আনুষ্ঠানিকভাবে ১৯৫৬র সংবিধানের দুইটি রাষ্ট্রভাষার নীতির প্রতি তাদের সমর্থন ব্যক্ত করে

বাংলাদেশের স্বাধীনতা

মূল নিবন্ধ: বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ
যদিও ১৯৫৬ সালের পর সরকারি ভাষা সংক্রান্ত বিতর্কের অবসান হয়, কিন্তু ১৯৫৬ সালে আইয়ুব খানের সামরিক শাসনামলে পূর্ব পাকিস্তানীদের বঞ্চিত করে পশ্চিম পাকিস্তান সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যায়জনসংখ্যার দিক থেকে সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়া সত্ত্বেও সামরিক ও বেসামরিক চাকুরীর ক্ষেত্রে বাঙালিদের উপস্থিতি ছিলো নগণ্যএছাড়া জাতীয় রাজস্ব ও সরকারি সাহায্যের দিক থেকেও বাঙালিদের প্রাপ্ত অংশ ছিলো খুবই কমউন্নয়নশীল রাষ্ট্রে অগণতান্ত্রিক সরকারের অধীনে এভাবে ক্রমাগত শোষিত ও বঞ্চিত হতে হতে বাঙালিরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেএরই প্রভাব হিসেবে আঞ্চলিক স্বার্থসংরক্ষণকারী রাজনৈতিক দল হিসেবে বাঙালি জাতীয়তাবাদী দল আওয়ামী লীগের প্রতি মানুষের সমর্থন বাড়তে থাকে এর ফলেই পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ ভাষা আন্দোলনের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে আরো অধিকতর প্রাদেশিক সায়ত্ত্বশাসন ও গণতন্ত্রের দাবিতেছয় দফা আন্দোলন শুরু করেএই ছয় দফার একটি দাবি ছিলো পূর্ব পাকিস্তানের নাম বাংলাদেশ ঘোষণা করতে হবে এবং এই আন্দোলনই পরবর্তীতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে রূপ নেয়

প্রভাব

বাঙালির সাংস্কৃতিক জীবনে বাংলা ভাষা আন্দোলনের তাৎপর্যপূর্ণ প্রভাব বিদ্যমানবাঙালির মধ্যে বাংলা ভাষার বিভিন্ন উপলক্ষ্য উদযাপন ও ভাষার উন্নয়নের কাজ করার মানসিকতা তৈরিতে এ আন্দোলনের যথেষ্ট ভূমিকা আছেবাংলাদেশে ২১ ফেব্রুয়ারি ‘'মাতৃভাষা দিবস' বা '‘শহীদ দিবস’' হিসেবে ও একই সাথে একটি রাষ্ট্রীয় ছুটির দিন হিসেবে পালিত হয়এছাড়া ফেব্রুয়ারি মাসটিকে আরো নানাভাবে উদযাপিত হয় যার মধ্যে রয়েছে মাস ব্যাপী বইমেলা উদযাপন, যা একুশে বইমেলা নামে পরিচিতএছাড়াও ভাষা আন্দোলনে আত্মত্যাগকারীদের ত্যাগের সম্মানে এ মাসেই ঘোষণা ও প্রদান করা হয় বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রাষ্ট্রীয় বেসামরিক পুরষ্কার 'একুশে পদক' মানুষের ভেতর একুশের আবেগ পৌঁছে দিতে একুশের ঘটনা ও চেতনা নিয়ে রচিত হয়েছে বিভিন্ন প্রকার গান, নাটক, কবিতা, ও চলচ্চিত্রএর মধ্যে উল্লেখযোগ্য আবদুল গাফফার চৌধুরী রচিত গান আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো, যার সুর করেছেন সুরকার আলতাফ মাহমুদ ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের পর থেকেই বিভিন্ন কবিতা, গান, উপন্যাস, নাটক, চলচ্চিত্র, কার্টুন ও ছবিতে ভাষা আন্দোলনের নানান দিক প্রতিফলিত হয়েছেভাষা আন্দোলন নিয়ে উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে আছে শহীদ বুদ্ধিজীবী মুনীর চৌধুরী রচিত নাটক কবর, কবি শামসুর রাহমান রচিত কবিতা বর্ণমালা, আমার দুঃখিনী বর্ণমালা এবং ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯, জহির রায়হান রচিত উপন্যাস একুশে ফেব্রুয়ারি, এবং শওকত ওসমান রচিত আর্তনাদএছাড়া ভাষা আন্দোলনকে উপজীব্য করে নির্মিত হয়েছে জহির রায়হান পরিচালিতচলচ্চিত্র জীবন থেকে নেওয়া ২১ ফেব্রুয়ারিকে "আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস" হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকার ইউনেস্কোর কাছে লিখিতভাবে প্রস্তাব করে, যা ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেস্কোর ৩০তম সাধারণ অধিবেশনে নিরঙ্কুশ সমর্থন পেয়ে অনুমোদিত হয়
ভাষা আন্দোলনের স্মরণে নির্মিত প্রথম শহীদ ভাস্কর্যটি গুঁড়িয়ে দেয়ার দু'বছর পর ১৯৫৪ সালে নতুন একটি শহীদ মিনার তৈরি করা হয়যুক্তফ্রন্ট সরকারের সহায়তায় স্থপতি হামিদুর রহমানের নকশায় ১৯৫৭ সালে একটি বৃহত্তর শহীদ মিনারের নির্মাণ কাজ শুরু হয়হামিদুর রহমানের নকশায় ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্রাবাসের সামনের চত্বরে একটি বৃহৎ স্মৃতিস্তম্ভের পরিকল্পনা ছিলনকশার অর্ধবৃত্তাকার স্তম্ভগুলো মায়ের সাথে শহীদ সন্তানদের রূপক হিসেবে মিনারের বেদীর কেন্দ্রস্থলে তৈরি করা হয়১৯৫৮ সালে জারি করা সামরিক শাসনের ফলে স্থাপত্যটির নির্মাণ কাজে বিঘ্ন ঘটায়, কিন্তু অবশেষে নির্মাণ কাজ ঠিকমতো শেষ হয় এবং ১৯৬৩ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি আবুল বরকতের মা হাসিনা বেগম শহীদ মিনারের উদ্বোধন করেন১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে পাকিস্তানী সামরিক বাহিনী এ চমৎকার ভাস্কর্যটি ধ্বংস করে ফেলে, তবে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করার পর ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ সরকারের সহায়তায় এটি পুননির্মিত হয়
পূর্ব পাকিস্তানের বাইরে ভারতের পূর্ভাঞ্চলীয় রাজ্য আসামেও বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষায় আন্দোলন হয়১৯৬১ সালের ১৯ মে আসামের শিলচর রেলওয়ে স্টেশনে বাঙলার রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতির জন্যে সংগ্রাম করতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে ১১ জন বাঙালি শহীদ হনপরবর্তীতে বাঙলাকে আসামের তিনটি বাঙালি অধ্যুষিত জেলায় আধা-সরকারি ভাষার মর্যাদা প্রদান করা হয়